আকস্মিক সফরে ইউক্রেনে জো বাইডেন

আন্তর্জাতিক
Spread the love

রাশিয়ার আগ্রাসনের বর্ষপূর্তির চারদিন আগে ইউক্রেনে আকস্মিক এক সফরে গেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার উচ্চ-নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কিয়েভে পৌঁছান তিনি। এ সময় ইউক্রেনে দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করেন বাইডেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, রাজধানী কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগাম ঘোষণা ছাড়াই ইউক্রেনে আকস্মিক সফর ঘিরে কিয়েভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক ব্যস্ততা ও তোড়জোড় দেখা যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পোল্যান্ড সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুজার সাথে সাক্ষাতের পর আকস্মিকভাবে ইউক্রেন সফরে যান জো বাইডেন। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কিয়েভের আশপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাজধানীতে পৌঁছান জো বাইডেন। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি পোস্ট করেছেন জেলেনস্কি। এই ছবিতে তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হস্তমর্দন করতে দেখা যায়।

ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘কিয়েভে স্বাগত জোসেফ বাইডেন। আপনার এই সফর ইউক্রেনীয়দের প্রতি সমর্থনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নিদর্শন।’

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জো বাইডেনের কিয়েভ সফর ঘিরে ইউক্রেনের রাজধানীজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে। তবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা বিমান হামলার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ সফরে আসা বাইডেনের সঙ্গে দূরপাল্লার অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউজ বলেছে, শিগগিরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর দুই বছর পূর্তির মাত্র চারদিন আগে কিয়েভ সফরে গেছেন জো বাইডেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সৈন্যরা।

এই অভিযানের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন ভাষণ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার আগে কিয়েভে বাইডেনের সফর মস্কোকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

রুশ সৈন্যরা গত ৮ মাস ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এমনকি ইউক্রেনের চারটি প্রদেশের কোনোটিরই পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি রুশ সৈন্যরা। যদিও এসব প্রদেশের কিছু অংশ একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে মস্কো।

পশ্চিমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়া লড়াই করছে যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি ইউক্রেনের দখলে নেওয়া ভূখণ্ড কখনই ফেরত দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে মস্কো। অন্যদিকে কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার আলোচনার জন্য উন্মুক্ত নয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরুর এক বছর পর কিয়েভ এবং পশ্চিমারা পুতিনকে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রতি চীনের কূটনৈতিক সমর্থনের সংকেতও দেখা যাচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আলোচনার জন্য রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে শিগগিরই যাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কয়েক সপ্তাহ আগেও রাশিয়ার সাথে ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল চীন। এই চুক্তি সত্ত্বেও এতোদিন পর্যন্ত ইউরোপের চলমান সংঘাতে অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল বেইজিং। তবে বেইজিং মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করতে পারে বলে গত কয়েক দিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ওয়াশিংটন। 

ওয়াশিংটনের উদ্বেগ প্রকাশের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, ‘চীনের দাবি করার কোনো অবস্থানে নেই’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ‘রাশিয়ার সাথে চীনের ব্যাপক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব’— একেবারে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *